নিক্যাপ স্থানচ্যুতি

নিক্যাপ স্থানচ্যুতি ও চিকিৎসা

প্যটেলা বা নি ক্যাপ হাঁটুর জোড়ার তিনটি হাড়ের মধ্যে একটি। প্যাটেলা জোড়ার সামনে থাকে এবং জোড়াকে সুরক্ষা করে এবং হাঁটু সোজা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চিকিৎসা শাস্ত্রে যাকে প্যাটেলা বলে তাকে স্বাভাবিক বাংলায় হাঁটুর টুপি (নি ক্যাপ) বা হাঁটুর বাটি বলে। আঘাতের কারনে লিগামেন্ট ও পেশী ইনজুরি হয়ে এবং হাড় ভেঙে বাঁকাভাবে জোড়া লাগলে যে কোন বয়সেই প্যাটেলা স্থানচ্যুতি হতে পারে। জন্মগতভাবে লিগামেন্ট ও মাংসপেশি না থাকা বা থাকলেও সংকুচিত বা ঢিলা, হাড়ের অস্বাভাবিক আকৃতি, হাঁটু ভিতর বা বাহির পার্শ্বে বাঁকা, প্যাটেলা আকৃতিতে ছোট বা বড় এবং প্যাটেলার অবস্থান সঠিক স্থানে না হয়ে উপরে বা নীচে থাকলে প্যাটেলার ডিসপ্লেসমেন্ট হয়। এভাবে চলতে থাকলে হাড় ও মাংসপেশির বৃদ্ধি কম হয়, লিগামেন্ট ঢিলা হতে থাকে এবং জোড়া বাঁকা হতে থাকে। সরাসরি আঘাত ও হাঁটুর মচকানো মুভমেন্টে প্যাটেলা ডিসপ্লেসমেন্ট হয়। ফুটবল, হকি, শারীরিক কসরত প্রদর্শনকারী খেলোয়াড়দের প্যাটেলা স্থানচ্যুতির প্রবণতা বেশি। আঘাতে প্যাটেলা স্থানচ্যুতি হলে তীব্র ব্যথা হয় এবং হাঁটু সোজা ও ভাজ করতে ভীষণ কষ্ট হয়। জোড়া ফুলে যায়। অনেক সময় ডিসপ্লেসমেন্টের সাথে অন্যান্য হাড় ভাঙতে পারে। স্থানচ্যুতি প্যাটেলার ২৪% তরুণাস্থি ও হাড়ের ক্ষতি হয়।

চিকিৎসাঃ যে চিকিৎসা পদ্ধতিই গ্রহণ করা হোক না কেন কম পক্ষে দেড় মাস থেকে চার মাসের একটি পরিচর্যা (রিহেবিলিটেশন) গ্রহন করতে হবে। স্থানচ্যুতি প্যাটেলার সুচিকিৎসা নির্ভর করে রোগীর বয়স, স্থানচ্যুতির প্রকারভেদ, হাড়ের বৃদ্ধি ও গঠন, হাড় ও তরুণাস্থির ফ্র্যাকচার এবং টিস্যুর অবস্থার উপর। হাঁটুর সামনে ও পিছনের পেশী শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে এবং হাঁটুর স্বাভাবিক মুভমেন্ট ফিরিয়ে আনতে হবে। কটির (হিপ) জোড়ার সামনের (ফ্লেক্সর) ও বাহির (এবডাকটর) পার্শ্বের এবং তলপেটের পেশীর ব্যায়ামের মাধ্যমে হাঁটুর পূর্ণ ভারসাম্য ও ওজনবহনকারী ক্ষমতা ফিরে আসবে।

হাঁটুতে সাপোর্ট (নি ব্রেচিং) ও টেপিং ব্যবহার করলে এবং গতি নিয়ন্ত্রিত জুতা পরিধান করলে প্যাটেলার সঠিক অবস্থানে সহায়তা হবে।

শল্য চিকিৎসাঃ যে ক্ষেত্রে হাড় ও তরুণাস্থির ইনজুরি, প্যাটেলা চরমভাবে অস্থিতিশীল, প্যাটেলার ভিতর পার্শ্বে লিগামেন্ট ও পেশী ইনজুরি এবং ব্যাক্তি খেলোয়াড় হলে অপারেশন করাতে হয়। বয়স ও হাড়ের বৃদ্ধির তারতম্যে বিভিন্ন ধরনের শল্য চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। হাড়ের বৃদ্ধি সম্পূর্ণ না হলে প্যাটেলার উপরে ও নীচে পেশী ও টিস্যু রিলিজ, রিপেয়ার এবং নতুন লিগামেন্ট তৈরীর মাধ্যমে স্থানচ্যুতি প্যাটেলাকে সঠিক অবস্থানে আনতে হবে। হাড়ের বৃদ্ধি সম্পূর্ণ হলে প্যাটেলার উপরে ও নীচে পেশী ও টিস্যু রিলিজ, রিপেয়ার, নতুন লিগামেন্ট তৈরী এবং টিবিয়াল টিউবারোসিটি কেঁটে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে স্থানচ্যুতি প্যাটেলাকে সঠিক অবস্থানে আনতে হবে।

আর্থ্রোস্কোপিক চিকিৎসাঃ আর্থ্রোস্কোপ ছোট ছিদ্র দিয়ে জোড়ায় প্রবেশ করিয়ে পেশী ও টিস্যু রিলিজ, রিপেয়ার এবং নতুন লিগামেন্ট তৈরীর মাধ্যমে স্থানচ্যুতি প্যাটেলাকে সঠিক অবস্থানে আনা হয়। চিকিৎসার পর হাঁটুর স্বাভাবিক নড়াচড়া ও পেশী শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়ামের মাধ্যমে প্যাটেলার সঠিক অবস্থান নিশ্চিত করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *